আজ দীপাবলি, কালীপুজো। আলোর উৎসব। উৎসব কি বাজিরও? আদালত অবশ্য বাজি নিয়ে নানান নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কলকাতা হাইকোর্ট সমস্ত ধরনের বাজি ফাটানোতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বাজি ব্যবসায়ীরা সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন। শীর্ষ আদালত কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ খারিজ করে পরিবেশবান্ধব বা সবুজ বাজি পোড়ানোয় ছাড় দিয়েছে।
প্রশ্ন হল, পরিবেশবান্ধব বা সবুজ বাজি কাকে বলে? গত জুলাই মাসেই সুপ্রিম কোর্ট বাজিতে ব্যবহৃত অস্বাস্থ্যকর উপাদান বেরিয়াম সল্টের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ে সেই নিষেধাজ্ঞাকেই মান্যতা দেওয়া হয়েছে। তা পালনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে রাজ্য সরকারগুলিকে।
রাজ্যের বাজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবুজ বাজি র বিষয়টাই আমরা জানি না। এটা খায় না মাথায় দেয়, কে জানে। পুলিশও এ নিয়ে বিভ্রান্ত। বাজি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কলকাতা পুলিশের বৈঠকেও বিষয়টি ওঠে। লালবাজার এক নির্দেশিকায় বলেছে, সবুজ বাজির বাক্সে সিএসআইআর এবং ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের হলোগ্রাম বা লোগো থাকবে। থাকতে হবে স্ক্যান করার মতো কিউআর কোড। এসব ধরার জন্য পুলিশকে সিএসআইআর-নিরি গ্রিন কিউআর কোড এপ ডাউনলোড করতে হবে। পুলিশের পক্ষে কি এসব করা সম্ভব? স্রেফ আপ দিয়ে বেআইনি বাজি ধরা সম্ভব কি না, প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশের বড় কর্তারা। কার এত সময় আছে যে, এসব খতিয়ে দেখবে? জাল লোগো বা হলোগ্রাম তো যে কেউ লাগিয়ে নিতে পারে, যুক্তি পুলিশের। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই রাজ্যে প্রায় কোথাও পরিবেশবান্ধব বাজি তৈরি হয় না। তাঁদের কাছে সবুজ বাজির কোনও তালিকা নেই। তালিকা নেই পুলিশের কাছেও। পুলিশ বুঝতে পারছে না, কোনটা সবুজ বাজি, কোনটা নয়। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ আগেই বলেছিল, এ ব্যাপারে পুলিশ বিশেষজ্ঞ নয়। পুলিশের সেই পরিকাঠামোও নেই বাজি পরিবেশবান্ধব কি না, তা পরীক্ষা করার। ইতিমধ্যে রাজ্যে প্রচুর শব্দবাজি ঢুকে গিয়েছে। চোরাগোপ্তা সেই বাজি বিক্রিও হচ্ছে। যদিও পুলিশ শব্দবাজির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। অনেক বাজি বাজেয়াপ্তও হচ্ছে। পুলিশই বা কত দিক সামলাবে।
আরও পড়ুন : কবরস্থান নয়, বিজেপি সরকার জনগণের টাকায় মন্দির বানায়: যোগী আদিত্যনাথ
এখন প্রশ্ন হল, আদালতের নির্দেশ মেনে আজ রাতে শুধু পরিবেশবান্ধব বাজিই ফাটবে কি না। নাকি শব্দবাজিও ফাটবে? গতকালই শহর ও শহরতলিতে ইতিউতি বাজির শব্দ পাওয়া গিয়েছে। তবে তা খুব বেশি নয়। আজ বড় পরীক্ষা পুলিশের সামনে। হাইকোর্টও বুধবার সুপ্রিম কোর্টের রায়কেই বহাল রেখেছে। শীর্ষ আদালত বলেছে, পরিবেশবান্ধব বাজি ফাটানো যাবে। হাইকোর্ট সেটাই বলেছে। বাজি ব্যবসায়ীরাও এই রায়ে খুশি। আদালতের রায়, করোনা ইত্যাদির কারণে এমনিতেই বাজির ব্যবসা খুব মার খেয়েছে। সবাই সবুজ বাজির খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছে। অনেককেই বলতে শোনা গেল, কোথায় পাওয়া যাবে সবুজ বাজি। গতকাল রাত যত বেড়েছে, উত্তর কলকাতায় শব্দ বাজির তাণ্ডবও তত বেড়েছে। এখন দেখার, আজ রাতে কী হয়। মানুষ কতটা সচেতন, তা বৃহস্পতিবার রাতে বোঝা যাবে।